বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ ॥
প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে ভারতের নির্মাণ, অটো, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে। চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বিপদের মুখোমুখি হয়েছে ভারত।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, পাঁচটি আমদানি সামগ্রী- বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, অন্যান্য যন্ত্র ও যান্ত্রিক সরঞ্জাম, জৈব রাসায়নিক, প্ল্যাস্টিক, অপটিক্যাল এবং অস্ত্রপচার যন্ত্রপাতির জন্য চীনের ওপর ভারত ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই পাঁচ আমদানি সামগ্রী ভারতের মোট আমদানির প্রায় ২৮ শতাংশ। চীনের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় ভয়াবহ আঘাত আসতে পারে এই পাঁচ আমদানি সামগ্রীতে।
ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, যদিও ভারতের বাণিজ্যের ওপর কোভিড-১৯ এর সামগ্রিক প্রভাব পরিমিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে; তারপরও নির্মাণ, পরিবহন, রাসায়নিক এবং যান্ত্রিক পণ্য-সামগ্রীর উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে ভারতের রফতানি খাতে বেশি প্রভাব পড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ভারতের মোট রফতানিতে চীনের অংশ ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট যা রফতানি করে তার খুবই নগন্য একটি অংশ করে চীনে। চীনে করা হয়। কিন্তু জৈব রাসায়নিক এবং তুলার মতো নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের রফতানিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।
২০১৮ অর্থ-বছরে ভারতের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৫০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৭৩ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়েছে শুধুমাত্র চীন থেকেই; যা প্রায় ১৪ শতাংশ। ভারতের আমদানির অন্যতম বৃহৎ উৎস হলো চীন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের লাগাম টানতে ব্যর্থ হওয়ায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারির পরও দেশটির শিল্পাঞ্চল এবং কল-কারখানাগুলো বন্ধ থাকার শঙ্কা রয়েছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে দেশটির কয়েকটি শহর অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব শহরের কিছু কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান চালু হলেও কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি। যে কারণে দেশটির উৎপাদনেও মারাত্মক ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে সঙ্কটের কারণে চীন থেকে ভারতের আমদানিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির জৈব রাসায়নিক খাতের। কারণ ভারতের জৈব রাসায়নিক আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশই আসে চীন থেকে। যদিও দেশটি যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও রাসায়নিক পণ্য আমদানি করে।
চীন এবং হংকং থেকে প্রায় ৫৭ শতাংশ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি করে ভারত। এর ৪০ শতাংশ চীনা মূল-ভূখণ্ড থেকে আসে। যে কারণে ভারতের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি আমদানির প্রায় অর্ধেক করোনার প্রভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভারত অপটিক্যাল ও অস্ত্রপচার যন্ত্রপাতির প্রায় ১৭ শতাংশ আমদানি করে চীন থেকে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতের এই খাতও বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে বলে দেশটির বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও প্ল্যাস্টিক খাত ও দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতি যদি আগামী তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে ভারতের ওষুধ উৎপাদনে কাঁচামালের (ওষুধের সক্রিয় উপাদান- এপিআই) সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
দেশটির ওষুধ শিল্পের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, অ্যান্টি ডায়াবেটিস-সহ বেশ কিছু ওষুধ চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। এসব ওষুধের কাঁচামালের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ চীন থেকে আনে ভারত।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে হুন্দাই, টেসলা, ফোর্ড, নিসান, হোন্ডাসহ আরও কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ায় কারখানা বন্ধ হয়েছে হুন্দাইয়ের এবং জাপানে নিশানের। ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন শুধু চীনে বন্ধ রয়েছে। তবে যন্ত্রাংশ সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করায় শিগগিরই অন্যান্য দেশেও তা বন্ধ হতে পারে।
গত ডিসেম্বরে চীনে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। চীনে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৪৯২ জনে পৌঁছেছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে বিশ্বের অন্তত ২৪টি দেশে এখন পর্যন্ত ৫০০ জনের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।